মানবদেহ ও ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার কার্যকরী ভূমিকা।

হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অ্যালোভেরা তাহলে খাদ্য তালিকায় কেন নয়?

অবাক হলেন কি? হ্যা অবাক হবারই কথা, যাহোক আসুন জানি মূল কথাটা কি? আমরা আজকাল প্রায়ই ফেসবুকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির নিয়ম ও উপকরণ নিয়ে অনেক পোস্ট দেখে থাকছি যার মধ্যে প্রতিটিতেই অন্যান্য উপকরণের সাথে আলোভেরা বিদ্যমান । তাহলে এখান থেকে আপনি কি বুঝলেন, অ্যালোভেরা একটি ন্যাচারাল ক্লিনজার এর মত কাজ করছে যেটি ভাইরাসকে ধ্বংস করে জীবাণুমুক্ত করতে সাহায্য করছে। কারণ অ্যালভেরাতে প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাঙ্গাসকে ধ্বংস করার কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে । আসুন তাহলে জেনে নেই আমাদের মানবদেহের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন‌ করছে এই অ্যালোভেরা।

Aloe Vera Plant


অ্যালোভেরা-তে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানগুলো কি কি?

অ্যালোভেরা মানবদেহে ন্যাচারাল ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে এবং টক্সিন উপাদানকে ডি-টক্সিফাইড করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। যা আমাদের বিভিন্ন রোগ‌ থেকে মুক্তি দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ অ্যালোভেরা-তে রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, বি, সি, ই, ভিটামিন বি-১২, স্যাফোনিন, লিগনিন এবং ফলিক এসিড ইত্যাদি সহ অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। এর মধ্যে বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২ খুব কমই উদ্ভিদের মধ্যে পাওয়া যায়, যা কিনা আমাদের মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

অ্যালোভেরা-তে বিদ্যমান আরো একটি দুর্দান্ত পুষ্টি উপাদান সালিসাইলিক অ্যাসিড। এই উপাদানটি এসপিরিনের মতো একটি প্রদাহ নাশক হিসেবে কাজ করে। যার ফলে অ্যালোভেরা খেলে দেহের ব্যাথা বেদনা অনেকাংশে লাঘব হয়। এছাড়াও অ্যালোভেরা-তে মিনারেল-এর মধ্যে আছে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক বা দস্তা, কপার, ক্রোমিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম  আয়রন ইত্যাদি। মূলত অ্যালোভেরাার পাতার মধ্যস্থিত জেলি সদৃশ সাদা অংশটুকুই ব্যবহৃত হয়ে থাকে ত্বকের যত্নে ও পানীয় হিসেবে পান করার জন্য।

কার্যত এতগুলো পুষ্টি উপাদানের এই সমন্বিত উপস্থিতির কারণেই ও অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার জন্যেই অ্যালোভেরা মূলত খাবার হিসাবে গ্রহণ ও বাহ্যিক ব্যবহারে এতো জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।অ্যালোভেরার কিছু উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধার মধ্যে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো উল্লেখযোগ্য।


অ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে ও  সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কি  ধরনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করে?

শরীরের হাইড্রেশন বাড়ায়:

অ্যালোভেরা শরীর ও ত্বককে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা প্রদানে সাহায্য করে, যা লিভার এবং কিডনিতে ঘটে এমন ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াগুলিকে মসৃণভাবে সচল রাখতে সাহায্য করে ও ত্বকের সুরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

অ্যালোভেরা-তে এক ধরনের পলিফেনল নামে উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান রয়েছে। আর  এই পলিফেনলগুলির পাশাপাশি অ্যালোভেরাতে পাওয়া অন্যান্য অনুরূপ যৌগগুলি মানুষের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বৃদ্ধি রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন B12 এর উৎস:

অ্যালোভেরা হলো B12-এর একমাত্র নিরামিষ উৎসগুলোর মধ্যে একটি উৎস। B12  এমন একটি ভিটামিন, যা আমাদের লোহিত রক্তকণিকা এবং ডিএনএ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কিন্তু এটি বেশিরভাগই মাংসে পাওয়া যায়।

কাটা এবং পোড়া নিরাময়ে সহায়ক:

অ্যালোভেরা ত্বকে জেল প্রয়োগ করে একটি সাময়িক ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি প্রাচীনকাল থেকে ঘা, কাটা এবং পোড়ার চিকিৎসায় জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে যার মধ্যে সানবার্ন ও রয়েছে।

ত্বকের গঠন ধরে রাখতে সাহায্য করে:

টপিকাল অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত ব্যবহারের সাথে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরা জেল নিয়মিত ব্যবহারে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত ব্যবহারের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়:

অ্যালোভেরা জেল এবং জুস সফলভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইনসুলিন প্রতিরোধেও সহায়তা করে। অ্যালোভেরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

এই সুবিধাগুলোর পাশাপাশি, অ্যালোভেরার জুসকে ওজন ব্যবস্থাপনার একটি টেকসই উপায় হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা এটিকে সারা বিশ্বের অতিরিক্ত ওজনের লোকদের ডায়েট চার্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে।

ডেন্টাল প্লাক প্রতিরোধক:

দাঁতের ক্ষয়, সেইসাথে মাড়ির রোগ, সারা বিশ্বের প্রায় সমস্ত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। মৌখিক সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার সর্বোত্তম উপায়গুলির মধ্যে একটি হল প্লাক তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করা যা দাঁতে ব্যাকটেরিয়াল বায়োফিল্ম। অ্যালোভেরা মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ডেন্টাল প্লাকের সমস্যা কমাতে কার্যকরী অবদান রাখে।

ক্যানকার ঘা চিকিৎসায় সহায়ক:

বেশিরভাগ লোক তাদের জীবনে অন্তত একবার মুখের ঘা বা ক্যানকার ঘা অনুভব করেছেন। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠোঁটের নীচে বা মুখের ভিতরের অংশকে প্রভাবিত করে এবং মাঝে মাঝে খুব বেদনাদায়ক হতে পারে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা জেল ক্যানকার ঘা নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।

মেটাবলিজমে সহায়ক:

মানবদেহে মেটাবলিসম বা খাদ্য ভেঙে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াতে  অ্যালোভেরার অসাধারণ কাজ করে এবং আমাদের  স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়:

অ্যালোভেরা জেল কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ল্যাটেক্স হল অ্যালোভেরার পাতার ত্বকের নিচে আঠালো হলুদ অবশিষ্টাংশ এবং এতে অ্যালোইন এবং বারবেলোইন রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে অত্যন্ত কার্যকর ।

এপিথেলিয়াম টিস্যু উন্নত করে:

আমাদের শরীরের যেমন স্কিন ছাড়াও পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্রের ভেতরের দিক যার ভেতর দিয়ে খাবার হজম হয়, শ্বাসনালী এবং ফুসফুস, মূত্রতন্ত্র ও মুখের ভেতরের দিকে এপিথেলিয়াম টিস্যু বিদ্যমান রয়েছে। আর এই এপিথেলিয়াম টিস্যুর সার্বিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে ও উন্নত করতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত কার্যকরী।

উপরোক্ত, আলোচনা থেকে আমরা এটা উপলব্ধি করতে পারছি যে অ্যালোভেরা আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি-কে আরো উন্নত ও স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাহলে আমরা কেন অ্যালোভেরা-কে আমাদের প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করছি না রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ করে এই করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের সময় একটু ভেবে দেখেছেন কি? তাহলে কি শুধুমাত্র আমাদের দেহের বাহ্যিক সুরক্ষায় দরকার দেহের আভ্যন্তরীণ সুরক্ষার দরকার নেই? আমার মতে অবশ্যই দরকার।

তাই আসুন আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অ্যালোভেরা জুস সেবনের অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করি ও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করি এবং নিজে সুস্থ থাকি পরিবারের অন্যদেরও ভালো রাখি।

কোন মন্তব্য নেই

Ollustrator থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.