অলৌকিক উদ্ভিদ 'অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার' | Miracle Plant 'Aloe Barbadensis Miller'

অ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) কি ধরনের উদ্ভিদ?
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী আমাদের সবারই সুপরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা উদ্ভিদটি স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, এবং ত্বকের যত্নের ওষধি বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য শতাব্দী ধরে পরিচিত এবং ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজ থেকে ছয় হাজার বছর পূর্বে মিশরে অ্যালোভেরার উৎপত্তি হয়। অ্যালোভেরা নামটি আরবি শব্দ "অ্যালোহ" থেকে এসেছে যার অর্থ "জ্বলজ্বলিত তিক্ত পদার্থ" এবং ল্যাটিন ভাষায় "ভেরা" অর্থ "সত্য"।

Aloe Barbadensis Miller

২০০০ বছর আগে গ্রীক বিজ্ঞানীরা অ্যালোভেরাকে সর্বজনীন প্যানাসিয়া হিসাবে বিবেচনা করেছিল, মিশরীয়রা অ্যালোভেরা-কে "অমরত্বের উদ্ভিদ" বলে অভিহিত করেছিল। মিশরীয় রানী নেফারতিতি এবং ক্লিওপেট্রা তাদের নিয়মিত সৌন্দর্য চর্চায় নিয়মিত অংশ হিসাবে এটি ব্যবহার করে থাকতো। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাস সৈন্যদের ক্ষতের চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়াও ইতিহাসবিদদের অনেকেই ছিলেন যারা নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস সেবন করতেন তার মধ্যে নেপোলিয়ন, সম্রাট আলেকজান্ডার, মহাত্মা গান্ধী এবং বাদশা সুলাইমান ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও এটি উল্লেখ্য ও সর্বজন স্বীকৃত যে সুস্থ পরিপাকতন্ত্র সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ বহন করে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা জেল পান করলে পরিপাকশক্তি এবং পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে প্রোটিন।


অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার কোন প্রজাতির অ্যালোভেরা?

অ্যালো পরিবারে কয়েক শত রকমের অ্যালোভেরা আছে। কিন্তু, মানুষের ব্যবহারের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি শুধু উপযোগী এবং উপকারী। সবথেকে উপকারী যে ধরনটি তার বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার। ডক্টর ফিলিপ মিলার লন্ডনের চেলসি ফিজিক গার্ডেনে প্রধান উদ্ভিদবিদ তাঁর বহু ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে বিস্ময়কর জাতের উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এর ক্যালিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বার্বাডোস ছিল ঐতিহাসিক স্থান যেখানে উদ্ভিদবিদ এবং এক্সপ্লোরার ডক্টর ফিলিপ মিলার বিষ্ময়কর অ্যালোভেরা প্রজাতি আবিষ্কার করেছিলেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ভিদটির বোটানিকাল নাম অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার প্রদান করেছিলেন। 

এটি লিলিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত এবং এটি একটি বহুবর্ষজীবী, মটর-সবুজ বর্ণের উদ্ভিদ। এটি আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার শুষ্ক অঞ্চলে জন্মে। এই প্রজাতির অ্যালোভেরার পাতা ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এদের হলুদ রঙের ফুল হয় এবং ফুল সহ এর উচ্চতা হয় ৫ থেকে ৬ ফুট। ৪০-৪৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এটি উৎপাদিত হয়। তিন থেকে চার বছর সময় লাগে এটি প্রাপ্তবয়স্ক হতে( কমপক্ষে ৩৬ মাস)। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছ অবশ্য বিভিন্ন মজার নামে পরিচিত যেমন অলৌকিক গাছ বা মিরাকেল প্লান্ট, বার্ন প্লান্ট এবং মেডিসিনাল অ্যালো ইত্যাদি।

অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার কি কি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ?
অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলারে প্রাকৃতিকভাবেই রয়েছে ২০০ টির অধিক পুষ্টি উপাদান। যার মধ্যে ২০টি মিনারেলস (ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, কপার, জিংক ইত্যাদি) ৭৫টি-নিউট্রিয়েন্টস, ১২ রকমের ভিটামিন (ভিটামিন এ, বি-১ , বি-২, বি-৩, বি-৬, বি-১২ ,সি, ই ইত্যাদি) এবং গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপকারী। এই সকল উপাদান মানবদেহে সুস্থ পরিপাকতন্ত্র ও দৈনিক শক্তি বজায় রাখতে সহযোগিতা করে। এই অ্যালোভেরা-টির মধ্যে স্যাপনিন নামের একটি সাবান ধর্মী ন্যাচারাল ক্লিনজার উপাদান পাওয়া যায় যা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাসের বিরুদ্ধে চমৎকার ফলাফল দেয়। লিগনিন নামের আরেকটি উপাদান পাওয়া যায় এতে যা আমাদের ত্বকের মধ্যে দিয়ে খুব দ্রুত ঢুকতে পারে। এটি অন্য পুষ্টি উপাদানের বহনের চমৎকার বাহনও বটে।

এছাড়া নিপাসেস এবং প্রটোসেস নামের দুটি এনজাইম রয়েছে এর মধ্যে যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এতে একটি লং চেইন সুগার( লম্বা শিকলযুক্ত চিনি) বা মনোপলিস্যাকারাইড ও পলিস্যাকারাইড রয়েছেন যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করতে সাহায্য করে। অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এটা বুঝতে পারছি যে, আপনার আমার দৈনন্দিন সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় নিশ্চয়তা দিতে অ্যালোভেরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


Aloe Barbadensis Miller.

এছাড়াও অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার-এ মনোস্যাকারাইড এবং পলিস্যাকারাইডগুলির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টি-মাইকোটিক এবং ইমিউন-উত্তেজক প্রভাব রয়েছে। অ্যালোভেরার এই বৈশিষ্ট্যগুলি হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোলেস্টেরল এবং পিত্ত অ্যাসিডের মতো অসংখ্য ক্ষতিকারক পদার্থ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে। এছাড়া এতে বিদ্যমান এনজাইমগুলি আমাদের প্রতিদিনের খাবার গ্রহণের শর্করা, প্রোটিন এবং লিপিডগুলি শোষণে সহায়তা করে। এই প্রজাতির অ্যালোভেরা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপায়ে উভয়ই কাজ করতে পারে এবং এতে বিদ্যমান লিনগিন হলো ডায়েটরি ফাইবার যা হজমকে উদ্দীপিত করে এবং ত্বকে গভীরভাবে প্রবেশ করতে পারে এবংং স্থানান্তরিত করে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদার্থের বাহক হিসাবে। 

কেন অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার অ্যালোভেরার অন্যান্য প্রজাতির অপেক্ষা বেশি উন্নত?

অক্সিজেন বৃদ্ধি করে:
অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার প্রজাতির অ্যালোভেরা গাছ অন্য প্রজাতির অ্যালোভেরা গাছের তুলনায় পরিবেশ থেকে অনেক বেশি পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা রাখে এবং অক্সিজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পরিবেশ থেকে দূষিত বা ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগ শুষে নিতেও এটি খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। 

সর্বত্র উৎপাদন যোগ্য নয়:
অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার প্রজাতির অ্যালোভেরা সকল আবহাওয়ায় উৎপাদন সম্ভব নয়। এটি কেবল আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার শুষ্ক অঞ্চলে জন্মায় এবং অন্যান্য প্রজাতির অ্যালোভেরার তুলনায় বেশি সময় লাগে এটি ব্যবহার উপযোগী হতে।

অধিক সংখ্যক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ:
এই প্রজাতির অ্যালোভেরার মধ্যে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান চিহ্নিত করা হয়েছে তেমন ভিটামিন সি, ই এবং বিটা কেরোটিন যা শরীরের প্রয়োজনে ভিটামিন A তে পরিবর্তিত হয় , ভিটামিন B১২ যা স্বল্প সংখ্যক উদ্ভিদে পাওয়া যায়। এছাড়াও মিনারেল বা খনিজ লবণের মধ্যে আছে ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক বা দস্তা, কপার বা তামা, ক্রোমিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রন ইত্যাদি।

প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম:
অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার অ্যালোভেরার এমন একটি প্রজাতি যা প্রতিকূল পরিবেশে অল্প পরিচর্যায় কোনো রকম বাড়তি কীটনাশক, সার বা হার্বিসাইড ব্যবহার ছাড়াই বেড়ে উঠতে পারে।

ঔষধি গুণসম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ:
অসংখ্য অত্যন্ত কার্যকরী ঔষধি পুষ্টি উপাদানের সমন্বিত উপস্থিতির কারণেই অ্যালো বার্বাডেন্সিস মিলার প্রজাতিটি  খাবার হিসাবে গ্রহণযোগ্য ও বাহ্যিক ব্যবহারে চমৎকার ফল প্রদান করতে সক্ষম।


ফর‌এভার-এর অ্যালোভেরা পণ্য সমূহ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন:




কোন মন্তব্য নেই

Ollustrator থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.